শতবর্ষ পার করেও ভোট দিতে পারেননি, এ নিয়ে ছিল আক্ষেপ। অবশেষে ১০৫ বছর বয়সে এসে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো আম্বিয়া বেগমের। নতুন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে পেলেন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়ার অধিকার।
রোববার (১৬ মার্চ) পটুয়াখালীর গলাচিপা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম চলছিল। হুইলচেয়ারে করে সেখানে উপস্থিত হন আম্বিয়া বেগম। তার বয়স ও প্রথমবার ভোটার হতে আসার খবর শুনে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিস্মিত হন।
আম্বিয়া বেগমের জীবন যেন এক জীবন্ত ইতিহাস। ব্রিটিশ শাসন, দেশভাগ, পাকিস্তান আমল, মুক্তিযুদ্ধ সবই তিনি দেখেছেন। জন্ম ১৯২০ সালের দিকে। স্বামী প্রয়াত আব্দুল কুদ্দুস খানের মৃত্যুর পর তিনি জীবনের নানা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এগিয়েছেন।
তার নাতি রাকিবুল হাসান জানান, এক জায়গায় স্থায়ীভাবে না থাকার কারণে এতদিন তার দাদির ভোটার হওয়া সম্ভব হয়নি। কখনো বাউফল, কখনো পটুয়াখালী, কখনো গলাচিপায় বসবাস করায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে এবার পরিবার উদ্যোগ নিয়ে তাকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
গলাচিপা সদর ইউনিয়নের তথ্য সংগ্রহকারী ও রতনদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লুৎফুন নাহার আম্বিয়া বেগমের ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেন। তিনি প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ ও যাচাই করে তার ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করেন।
গলাচিপা সদর ইউনিয়নের সুপারভাইজার ও বুড়িয়ার বাঁধ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন জানান, আম্বিয়া বেগমের জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করে দ্রুততার সঙ্গে ভোটার ফরম পূরণ করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাবেন।
ভোটার হতে পেরে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন আম্বিয়া বেগম। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও চোখেমুখে আনন্দের ঝলক ছিল। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “জীবনে অনেক কিছু দেখলাম, কিন্তু ভোট দিতে পারিনি। এতদিন পর হলেও এবার ভোটার হতে পেরে ভালো লাগছে। ইনশাআল্লাহ, এবার ভোট দেব।”
নতুন ভোটার তালিকায় নাম উঠতেই দেশের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটারদের একজন হয়ে গেলেন আম্বিয়া বেগম। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তার ভোটার হওয়ার খবরে পরিবারেও আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে।