পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির ২০২৫-২৬ কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল সবকটি পদে বিজয়ী হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
সমিতির মোট ৫৪৯ জন সদস্যের মধ্যে ৩৯৬ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে সভাপতি পদে বিজয়ী হয়েছেন পটুয়াখালী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির। তিনি ২২১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন, যেখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট মো. নাজমুল আহসান পান ১৩৭ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট শরীফ মো. সালাহউদ্দিন। লাইব্রেরি সম্পাদক পদেও কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অ্যাডভোকেট মো. মুজিবুল হক বিশ্বাস রানা নির্বাচিত হন।
এ ছাড়া সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমান পিকু (২৩৯ ভোট), সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির (১৯৩ ভোট), অ্যাডভোকেট মো. আশিকুর রহমান তুষার (২৬২ ভোট), ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান রিয়াজ (২৬৩ ভোট), সদস্য পদে অ্যাডভোকেট মো. মহিউদ্দিন রোমান (২৮০ ভোট) এবং অ্যাডভোকেট মারিয়াম আহমেদ (২৫২ ভোট) নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন পরিচালনা কমিশনের দায়িত্বে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মোহসীন উদ্দিন, আর সদস্য হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও অ্যাডভোকেট আ.ত.ম. বদিউজ্জামান।
এবারের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। ভোটগ্রহণ চলাকালে কিছু অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন জেলা জামায়াতের আমির ও সভাপতি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. নাজমুল আহসান।
তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, “নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতিত্ব করেছে এবং আমাদের ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি গোপন কক্ষে ভোটদানের ছবি তুলে দেখাতে বাধ্য করা হয়েছে।” তিনি ফলাফলকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে দাবি করেন এবং বিচার বিভাগীয় কমিশনের অধীনে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানান।
নির্বাচন পরিচালনা কমিশনের প্রধান অ্যাডভোকেট মো. মোহসীন উদ্দিন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “জেলা আইনজীবী সমিতির মোট ভোটার ছিল ৫৪৯ জন, যার মধ্যে ৩৯৬ জন ভোট দিয়েছেন। জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের সর্বোচ্চ ভোট ছিল ২০টি, আর সভাপতি প্রার্থী নাজমুল আহসান পেয়েছেন ১৩৭ ভোট। এরপরও যদি তিনি অভিযোগ তোলেন, তাহলে আমার কিছু করার নেই।”
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল কড়া নজরদারিতে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজিদুল ইসলাম সজল জানান, “নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য বাহিনী মোতায়েন ছিল। আমাদের চোখে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
উল্লেখ্য, এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে সুষ্ঠু নির্বাচনের শর্তে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলেও শেষ পর্যন্ত ভোট বর্জনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।