পটুয়াখালী সহ উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন পুকুর ও দিঘিতে বানিজ্যিক ভাবে কোরাল মাছ চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। এর ফলে এখন থেকে সামুদ্রিক শৈবাল এবং ফিড খাবার ব্যবহার করে মূল্যাবান এই মাছ চাষ করা সম্ভব হবে। নতুন এই প্রযুক্তির গবেষণায় দক্ষিণাঞ্চলে মাছ চাষে নতুন এক সফলতা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে মনে করেন মৎস্য খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘেরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কোরাল মাছের চাষ হয়ে আসছে। তবে কোরাল মাছ মাংসাসী হওয়ায় খাবার হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ ব্যবহার করা হয়। কৃত্রিম খাদ্যের অভাবে কোরাল মাছের চাষ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। তবে সম্প্রতি মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিশ প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একুয়াকালচার বিভাগ ‘বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক শৈবাল সহযোগে কৃত্রিম খাদ্যের মাধ্যমে কোরাল মাছ চাষ’ নামে একটি উপ প্রকল্পের মাদ্যমে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার আলীপুরের একটি গ্রামে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের একুয়াকালচার বিভাগের শিক্ষক ও এই গবেষণা কাজের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই গবেষণাতে কৃষকের পুকুরে কোরালের অধিক বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম খাদ্যে সামুদ্রিক শৈবালের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে কৃত্রিম খাদ্যে ০% থেকে ২০% হারে সামুদ্রিক শৈবাল প্রয়োগ করে কোরাল মাছকে খাওয়ানো হয়েছে। যেই কৃত্রিম খাবারে ১০% সামুদ্রিক শৈবাল ব্যবহার করা হয়েছে, এতে মাছের উৎপাদন বেশি পাওয়া গেছে।’
বাংলাদেশ মৎস্য বিভাগের সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিশ প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ শরিফুল আজম বলেন, ‘বাংলাদেশে কোরাল মাছের হ্যাচারি না থাকায় গবেষণা কাজে থাইল্যান্ডের হ্যাচারিতে উৎপাদিত কোরাল মাছের পোনা সংগ্রহ করে নার্সারি পুকুরে নার্সিং করার পর মজুদ পুকুরে মজুদ করা হয়। কোরাল মাছ মাংসাশী হওয়ায় নার্সারি পুকুরে মাঝে মাঝে জাল টেনে বেশি বড় পোনাকে আলাদা করা হয়। নার্সারি পুকুরে কোরাল মাছের পোনাকে সামুদ্রিক শৈবাল সহযোগে ৫০ ভাগ আমিষ সমৃদ্ধ কৃত্রিম খাদ্য প্রয়োগ করা হয়। এ সময় কোরালের পোনাকে দেহ ওজনের ২০-৮% কৃত্রিম খাদ্য সরবরাহ করা হয়।’ এই মাছকে দিন-রাতে মোট ৪ থেকে ৬ বার খাবার দেওয়া হয় বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
কৃষকদের পুকুরে চালানো এই গবেষণার ফলাফল দেখে খুশি উপকূলীয় এলাকার মাছ চাষিরা। কোরাল মাছ এর বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় এই মাছ চাষাবাদে তারা অনেক বেশি লাভবান হওয়ারও স্বপ্ন দেখছেন।
কোরাল মাছ বেশ পুষ্টিসমৃদ্ধ। কোরাল মাছে উন্নতমানের আমিষ রয়েছে যা আমাদের শরীরের পেশী গঠন, ক্ষতিগ্রস্থ কোষ মেরামত এবং হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে। কোরাল মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি সমৃদ্ধ উৎস। গবেষণা লব্দ ফলাফলে কোরাল মাছ চাষ করলে এক বছরে প্রতিটি মাছ সাড়ে তিন থেকে চার কেজী পর্যন্ত হয়ে থাকে।