পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন পটুয়াখালী বাউফল উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক নবীন তালুকদার(৪৭) এর পরিবার। গত ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে ঢাকার পল্টনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। পটুয়াখালীর বাউফলে নবীন তালুকদারের লাশ দাফন করা হলেও পরিবারটি এখন ঢাকায় বসবাস করছে, তবে সরকার কিংবা বিএনপি’র পক্ষ থেকে এই পরিবারটির তেমন কোন খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে না বলে দাবী পরিবারটির।
সম্প্রতি নবীন তালুকদারের মামা বাড়ি বাউফল উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নের ইন্দ্রকুল মীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায় বাড়ির মসজিদের পাশের কবরস্থানেই নবীন তালুকদারকে দাফন করা হয়েছে। বাড়িতে সুনসান নিরাবতা। বাড়ির অধিকাংশ পুরুষরাই জীবীকার তাগিদে ঢাকায় থাকেন। নবীন তালুকদারের পরিবারও ঢাকার শ্যামপুরে বসবাস করছে।
নবীন তালুকদার যুবদলের রাজনীতি করায় ঢাকায় নিয়মিত বিএনপি’র আন্দোলন সংগ্রামে অংশ গ্রহন করতেন। এ ছাড়া শ্যামপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজ এর সামনে একটি দোকান ছিলো নবীন তালুকদারের। যেখানে বই ,খাতা কলম সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করতেন তিনি। আর এ দিয়েই চলতো তার শংসার। তবে নবীন তালুকদারের মৃত্যুর পর সে দোকানটিও ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে পরিবারটি এখন অসহায় হয়ে অবস্থায় দিন পার করছে।
নবীন তালুকদারের স্ত্রী রুমা আক্তার জানান, শ্যামপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজ এর নবম শ্রেনীতে ছেলে এবং মেয়ে লেখাপড়া করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার স্বামীর মৃত্যু হলেও বর্তমানে তাদের আর কেউ কোন খোঁজ খবর রাখছে না। কোন ভাবে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে শংসার চালিয়ে নিচ্ছেন। তবে ৫ আগষ্ট এর পর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করলেও সরকার কিংবা বিএনপির পক্ষ থেকে কোন সহায়তা করা হয়নি।
নবীন তালুকদারের মামা বাড়ি সূর্যমনি ইউনিয়নের ইন্দ্রকুল মীর বাড়িতে কথা হয় নবীন তালুকদারের মামি রুশিয়া বেগম (৮৫) এর সাথে, তিনি বলেন, ‘এই বাড়িতেই বড় হয়েছে নবীন। দুই দুই ডা পোলাপান রাইখা মারা গেলে। বাড়ির কবরস্থানেই ওরে দাফন করা হইছে। আমাগো হাতে বড় হইছে। জীবনে অনেক কষ্ট করছে। পোলাপান শিক্ষিত করতে চাইছিলো। কিন্তু কি সবতো শ্যাষ।’
নবীন তালুকদারের মামাত ভাই রিপন মীর জানান, নবীন তালুকদারের মৃত্যুর পর তার পুরো পরিবারটি এখন অসহায় হয়ে পরেছে। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া সহ শংসারের যাবতীয় খরচ তারা কিভাবে মেটাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আমরা চাই সরকারের পক্ষ থেকে এই পরিবারটি পাশে দাড়ানো হোক।’
নবীন তালুকদারের মামা খলিল মীর বলেন, ‘মৃত্যুর পর সরকারের অনেক সংস্থা থেকে আমাদের সাথে যোগযোগ করা হলেও কোন ধরনের সহযোগীতা করা হয়নি।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন এর দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি বলেন, ‘নিহতদের তালিকা তৈরী করে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সহায়তা করা হবে। আমরা নিহতদের খোঁজ খবর রাখছি। পাশপাশি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নিহতদের কবর গুলোকে সংরক্ষনের জন্য বাধাঁই করে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এবং ওই এলাকার গুরুত্বপূর্ন একটি সড়ক নিহদ শহীদদের নামে নাম করণ করার বিষয়েও আমরা কাজ করছি।’