চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে তীব্র তাপদাহে দেশজুড়ে ছিল মরুর উষ্ণতা। ঘরে-বাহিরে কোথাও ছিল না একদণ্ড শান্তি। গরমের কারণে বাজার ঘাট, পাড়া মহল্লায় ছিল না মানুষের কোলাহল। তবুও চলে যাওয়া মাসটি মনে রাখবে সবাই। কারণ রোদের তীব্রতার কাছে অনেকে হার মানলেও লড়ে গেছে পটুয়াখালীর কৃষকরা। গোটা এপ্রিলজুড়ে তাপদাহে বিপর্যয়ে পড়েছে কৃষিখাত। চলমান সময়ে মাঠে রয়েছে রবি শস্য। কষ্টের সেই ফসল ঘরে তুলতে শহর পোড়া গরমকেও উপেক্ষা করে মাঠে অবিরত ছিল কৃষক পরিবার। কারণ এই মৌসুমে তাদের কাছে অধিক লাভের ফলন হিসেবে বেশ পরিচিত ‘মুগ ডাল’। চলতি বছরে মুগের ফলন ভাল হলেও টানা তাপদাহের কারণে ফসলের মাঠে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। সমাধান হিসেবে ছিল কেবলই বৃষ্টি। অবশ্য মে মাসের দ্বিতীয় দিনে কোথাও কোথাও বৃষ্টির দেখা পেলেও তাও দীর্ঘস্থায়ী নয়। একই সাথে বৈশাখের শুরু হতে বৃষ্টি না থাকায় পাটের বীজ বপন ও আউশের বীজতলা তৈরীতে বিলম্বিত হচ্ছে।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে এই জেলায় ৮৭ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে মুগ ডাল আবাদ হয়েছে। যার সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। এর বাজারদর হবে প্রায় ৮শ কোটি টাকা। যা গতবছরের তুলনায় উৎপাদন এবং বিক্রি কম। এবছর বৃষ্টি হলে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন মুগ উপাদন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
কৃষকরা বলছেন, এ বছর মুগ ডালের বাজারদর ভাল। কিন্তু অনেকেই সময় মতো ডাল তুলতে পারেনি। অসহনীয় গরমের কারনে শ্রমিকরা ডাল কর্তন করতে পারেনি। যার কারনে অনেকেই কিছুটা লোকসানের মধ্যে পরবে। তবে তীব্র তাবদাহে জমিতেও লবনক্ততা দেখা দিয়েছে। শুকিয়ে ছিল জমির মাটিও। অন্যান্য ফসল তেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। আশা করছি বৃষ্টি হলে যে ডাল রয়েছে সেগুলো চড়া দরে বিক্রি হবে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, রবি শস্যের ফলন ভাল হয়েছে। বৃষ্টি ছিল না। বৃষ্টি হলে মাটির উর্ভর শক্তি ভাল হত। গাছের শক্তি থাকত। এতে ফলন অধিক ভাল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। একটানা তাপদাহ এবং প্রচন্ড খড়ায় জমিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে, মাটির নিচ থেকে উপরে লবন উঠে আসছে। এর ফলে কিছু গাছ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সব গাছ লবন সহিষ্ণু নয়। যেমন বিনামুগ-৮ ও বারিমুগ-৬, এ দুই জাতের মুগ গাছ কিছুটা লবন সহিষ্ণু। এছাড়া স্থানীয় সোনামুগ লবন সহিষ্ণু না হওয়াতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ডালের বাজারদর ভাল। সঠিক সময়ে মুগ তুলতে পারলে কৃষক লাভবান হবেন।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, শহরজুড়ে তীব্র তাপদাহের প্রভাব পড়েছে কৃষিখাতে। রোদের তাপে মুগের জমিতে মাটি শুকিয়ে গেছে এবং কিছু অপরিপক্ব ডাল পেকে গেছে। এসব ডাল দ্রæত সময়ে কর্তন করা দরকার কিন্তু কৃষকরা তা পারছে না। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুগ ডাল কর্তন করে নারী-শিশু শ্রমিকরা। প্রচÐ তাপদাহে শ্রমিকরা সারাদিন ডাল কর্তনের কাজ করতে পারে না। তারা সকাল বিকেল মিলিয়ে ৪-৫ ঘন্টা ডাল কর্তন করে থাকে। যা পর্যাপ্ত নয়। অসহনীয় গরমে পুরো দিন কর্তনের কাজে লাগাতে পারছে না। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে দ্রæত কর্তন করতে পারবে এবং কৃষকরা আরও লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।