উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর অর্থনীতিতে আসছে নতুন সম্ভাবনা। জেলার সদর উপজেলার আউলিয়াপুরে নির্মিত হচ্ছে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড)। ৪১৮ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই বিশাল শিল্প এলাকা ২০২৬ সাল নাগাদ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্লট বরাদ্দ দিতে শুরু করবে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১,৪৪৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১,১০৫ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে এবং ৩৩৮ কোটি টাকা বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) অর্থায়ন করছে। ইতোমধ্যে ১৩০ একর জমিতে বালু ভরাট সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরো মাটি ভরাটের কাজ শেষ হবে।
প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, “প্রকল্প এলাকায় ১৫৪টি পরিবারের জন্য আবাসন, ড্রেন, ফুটপাত, কালভার্ট, স্কুলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ৩ লাখ মিটার সড়ক, ৩০ হাজার মিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ১০টি অফিস ও আবাসিক ভবন, হেলিপ্যাড এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। আগামী এক বছরের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের মাঝে প্লট বরাদ্দ দেওয়া শুরু হবে।”
ইপিজেড বাস্তবায়িত হলে উপকূলীয় এলাকার অর্থনীতির চাকা ঘুরবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যে অনেকে প্লট বরাদ্দের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে তারা আশা করছেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে, যাতে প্রকল্পটি সম্পূর্ণরূপে সফল হয়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো. সাইফুল্লাহ পান্না জানান, “২০২৬ সালের শুরুর দিকে বিনিয়োগকারীদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে। দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলছে এবং আগামী এক বছরের মধ্যেই ইপিজেডের কাজ দৃশ্যমান হবে।”
ইপিজেডের মাধ্যমে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান এবং ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি হবে বলে আশাবাদী স্থানীয় বাসিন্দারা। আবুল বাসার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমাদের এলাকায় অনেক তরুণ বেকার। ইপিজেড চালু হলে তারা কর্মসংস্থান পাবে, যা আমাদের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনবে।”
প্রকল্পের আওতায় জমিদাতা ১২৬ পরিবারের জন্য নির্মিত হবে আশ্রয়ণ এলাকা, যেখানে আধুনিক পানির ব্যবস্থা, স্যানিটেশন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে কুয়াকাটায় ২.২৫ একর জমিতে একটি বিনিয়োগকারী ক্লাব স্থাপন করা হচ্ছে, যা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাড়তি সুবিধা দেবে।
এই বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পটুয়াখালী অর্থনৈতিকভাবে আরও সমৃদ্ধ হবে এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্তে প্রবেশ করবে। তাই উদ্যোক্তা ও স্থানীয়রা সবাই তাকিয়ে রয়েছেন ২০২৬ সালের দিকে, যখন প্রকল্পটি পুরোপুরি কার্যকর হবে এবং উপকূলীয় অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনবে।