পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনে এসেছে পটুয়াখালীতে নির্মিত কয়লাভিত্তিক দ্বিতীয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। পায়রা সমুদ্র বন্দর সংলগ্ন রাবনাবাদ নদীর তীরে নির্মিত ‘আরএনপিল পটুয়াখালী ১৩২০’ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির আংশিক ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রোববার দুপুরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আশরাফ উদ্দিন। আনন্দ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘শনিবার রাত ১২ টা ১০ মিনিট থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।’
তিনি আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘সকল ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে মার্চ মাসে বাণিজ্যিকভাবে এই ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। এছাড়া জুনের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাবে বলে আশা করছি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দুইটি ইউনিট পুরোপুরি উৎপাদনে থাকলে দেশের সার্বিক বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ হবে।’
২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) ও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নোরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ বিনিয়োগে ‘আরএনপিএল পটুয়াখালী ১৩২০’ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। আন্তর্জাতিকমানের অত্যাধুনিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ২৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। ৫ বছর ৪ মাস নির্মাণকাজের পর কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলো। এটি পটুয়াখালীতে নির্মিত দ্বিতীয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ থেকে আড়াই-তিন কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান।
আরএনপিএল পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছেন, কেন্দ্রটি পুরোপুরি উৎপাদনে থাকতে প্রতিদিন ১২ হাজার মেট্রিকটণ কয়লা প্রয়োজন হবে। পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা ও লাইম স্টোন মজুদ রয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য দরকারি কয়লা আমদানির চুক্তি। প্রথম ইউনিটের উৎপাদনের জন্য এক লক্ষ ২৫ হাজার মেট্রিকটণ কয়লা কোল্ডইয়ার্ডে মুজদ রয়েছে। চলতি জানুয়ারি মাসে তিনটি জাহাজে আরও এক লক্ষ ৬৫ হাজার মেট্রিকটণ কয়লা আসবে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) শওকত ওসমান বলেন, ‘কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অত্যাধুনিক আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। যারফলে পরিবেশের ওপর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিকর তেমন কোন প্রভাব পরবে না।’
বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা জানান, উৎপাদনে যাওয়ার আগেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জেটি নির্মাণ, কুলিং টাওয়ার, ওয়াটার ফিড, কনভেয়ার বেল্ট, টারবাইন, চুল্লি, কোলস্টোর, স্টিল ষ্ট্রাকচার, বয়লার, ট্রান্সফরমার ও জেনারেটর স্থাপনসহ যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে। গতবছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুত করা হয়। ওই ইউনিটের সব ধরণের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কমিশনিং সম্পন্ন হয়েছিল।