তিব্র দাবদাহে জীবনরক্ষাকারী উপাদান ঔষধ সংরক্ষন ও বিপনন নিয়ে সংকট তৈরী হচ্ছে। অধিকাংশ ঔষধ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচের তাপমাত্রায় সংরক্ষন করার কথা থাকলেও সাম্প্রতিক সময় ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়ায় পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে হাতে গোনা দুই একটি ফার্মেসী ছাড়া পটুয়াখালী জেলার অধিকাংশ ঔষধের দোকানেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে দীর্ঘদিন অধিক তাপমাত্রায় ঔষধ সংরক্ষন করায় ঔষধের গুনগত মান নষ্ট হওয়ায় পাশাপাশি স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পরছে বলে মনে করেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমান সময়ে শিশুদের জন্য সব থেকে বেশি ব্যবহৃত একটি এন্টিবায়োটিক হচ্ছে সেফ-৩। স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল এর সেফিক্সিম গ্রুপের এই ঔষধের নির্দেশিকায় লেখা আছে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সংরক্ষন করুন। একই ভাবে ঠান্ডা কাশি কিংবা এলার্জি’র জন্য বহুল প্রচলিত ঔষধ ফেক্সো। এই ঔষধের সিরাপের গায়ে লেখা আছে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সংরক্ষন করুন। এই ভাবে নবজাতদের জন্য বহুল ব্যবহৃত ঔষধ ফাইটোমেনাজিওন গ্রুপের কে-ওয়ান। যার গায়েও লেখা রয়েছে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সংরক্ষন করুন। এমনি ভাবে সকল ঔষধের নির্দেশিকায় লেখা রয়েছে কোন ঔষধ কোন তাপমাত্রায় সংরক্ষন করতে হবে। তবে পটুয়াখালীতে অধিকাংশ দোকানেই সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।
এদিকে গত একমাসেরও বেশি সময় যাবত পটুয়াখালী জেলা এবং এর আশ পাশের এলাকায় ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়ায় তাপমাত্রা বিরাজ করছে। অধিকাংশ ঔষধ যেখানে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সংরক্ষন করার কথা সেখানে এই দীর্ঘ সময় অধিক তাপমাত্রায় ঔষধ সংরক্ষনের ফলে ঔষধের গুনগত মানে কি ধরনের প্রভাব পরলো সে বিষয়েও ভাবিয়ে তুলছে জেলার সচেতন মহলকে।
পটুয়াখালী শহরের কলেজ রোড এলাকার বাসিন্ধা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি আমার পরিবারের জন্য নিয়মিত ঔষধ কিনে থাকি। অবশ্য চেষ্টা করি সুপরিচিত দোকান থেকেই ঔষধ কেনার। আগে চিন্তা করতাম ঔষধের কোন ভেজাল আছে কিনা। তবে এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে ‘আমি যে ঔষধ কিনে আনছি সেটি কিভাবে সংরক্ষন করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার প্রচারনা করার পাশাপাশি ঔষধ ব্যবসায়ীদেরও সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা নিয়ে কাজ করতে হবে।’
পটুয়াখালী জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম কবির হাসান বলেন, ‘সঠিক তাপমাত্রায় ঔষধ সংরক্ষন ও বিপননের ব্যবস্থা না করলে ঔষধের গুনগত মান নষ্ট হয়ে থাকে। এ বিষয় এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে তা মানুষের জন্য নতুন একটি সংকট সৃষ্টি করতে পারে।’
তবে পটুয়াখালী ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক সিকদার কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এ নিয়ে কাজ করছে, ইতিমধ্যে ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ একটি নির্দেশনা জারি করেছে। এ ছাড়া ঔষধের দোকান গুলোতে যাতে তাপমাত্রা মাপার মেশিন থাকে সে জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া যাদের সম্ভব হয় তারা যেন এখনই এসি সংযোজন করেন এবং যাদের সামর্থ নেই তারা ফার্মেসীতে অধিক ফ্যানের ব্যবস্থা করার পাশপাশি পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন সুযোগ সৃষ্টি করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য বলা হয়েছে।’