পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা ও চিকিৎসা শিক্ষার অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালটি নির্মানে গ্রহণ করা প্রকল্পটি এ বছরের ৩০ জুন কাগজে কলমে সমাপ্ত হলেও বাস্তবে এখনও কাজ শেষ হয়নি। আর প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে এসে ছাত্রলীদের চাহিদার ৫ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে মারধর করে বেশ কয়েকবার ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়া সহ কাজ বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্দে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইতিমধ্যে মেডিকেল কলেজ নির্মান প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌর মেয়র সহ সংশ্লিষ্টদের অবিহতে করে চিঠি দিয়েছেন।
গত ৯ জুলাই গনপূর্ত বিভাগের ই/এম কাঠের কারখানা বিভাগ,শের ই বাংলা নগর ঢাকা এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজেদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতল স্থাপন প্রকল্পের আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণপূর্ত ই/এম কাঠের কারনানা বিভাগ নিয়োগপ্রাপ্ত। উক্ত প্রকল্পের আওতাধীন হোস্টেলের জন্য নির্ধারিত আসবাবপত্র সরবরাহ পরবর্তীতে তাঁর চাহিদার পেক্ষিতে পুরুষ ও মহিলা হোস্টেলে আসবাবপত্র সেটিং ও ফিটিং করানোর জন্য ঢাকা থেকে বিগত ১২ মে ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে টেকনিশিয়ান প্রেরণ করা হয়। হোস্টেলের আসবাবপত্র ফিটিং করে সময় কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি টেকনিশিয়ানদের কাজে বাধা প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে নির্বাহী প্রকৌশলী ই/এম বিভাগ বিগত ২০ মে ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আসবাবপত্র সেটিং করণের কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করতঃ অধ্যক্ষ, তিনিসহ ২৫০ বেড হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সহ ছাত্রলীগের কর্মীদের সাথে সাক্ষাত করে কাজের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে বিস্তরিত আলাপ আলোচনা সহযোগিতা চাওয়া হয়। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে পূণরায় টেকনিশিয়ান প্রেরণ করা হয়। বিগত ২২ জুন ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে নির্বাহী প্রকৌশলী ই/এম বিভাগ কে- ১৩১৬৬৬৪৩৪৩ নাম্বার থেকে আনুমানিক রাত ১১.৩০ ঘটিকার ফোন করে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয় দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং টেকনিশিয়ান যাতে প্রেরণ না করা হয় সে ব্যাপারে হুমকি প্রদান করেন। বিষয় টি তাঁকে এবং সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষকে টেলিফোনে অবহিত করা হয়। ঈদ-উল-আযহা পরবর্তীতে হোস্টেলের আসবাবপত্র ফিটিং এর সময় টেকনিশিয়াদের পূণরায় পটুয়াখালী মেডিকেলেজের ছাত্রলীগ কর্মীর সরকারী কাজে বাধা প্রদান করেন। এমনকি টেকনিশিয়ানরা যে হোটেলে রাতে অবস্থান করে সেখান থেকেও মারধর করে, মোবাইল কেড়ে নেওয়াসহ কলেজে ঢুকে যাতে কাজ না করে সে ব্যাপারে হুমকি প্রদর্শন করার টেকনিশিয়ানরা কলেজে ঢুকে কাজ করতে ভীত-সন্ততো বোধ করেন এবং তারা পটুয়াখালী ত্যাগ করেন। বিগত ০১ জুলাই ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে ঢাকা থেকে কর্তৃপক্ষের চাহিদার প্রেক্ষিতে পুনরায় নতুন(দশ) টেকনিশিয়ানদের হোস্টেলের আসবারপত্র ফিটিং করণের জন্য প্রেরণ করা হলে মহিলা হোস্টেলের আসবাবপত্র ফিটিং এর সময় কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ কতিপয় ছাত্রলীগ কর্মী সরকারী কাজে বাঁধা প্রদান করেন এবং কাজ না করার জন্য হুমকি প্রদর্শন করায় তারা প্রাণ ভয়ে কাজ করতে এবং স্থানীয় হোটেলে অবস্থান করতে চাচ্ছে না। এমতাবস্থায়, বারবার টেকনিশিয়ান পাঠানোর পরেও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের মারধরের হুমকি সহ কলেজে প্রবেশে নিষেধ করায় সরকারের কাজ যথাসময়ে বাস্তবায়ন হবে না মর্মে প্রতীয়মান। সুতরাং যথাসময়ে সরকারী কাজ বাস্তবায়ন করতে হলে স্থানীয় কলেজের ছাত্রলীগ কর্মীদের সরকারি কাজে বাধা প্রদানে বিরত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো হল। অন্যথায় প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সমাপ্ত হবেনা মর্মে আশংকা করা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তাঁর আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
এ বিষয় জানতে চাইলে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা: মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। ছাত্রলীগের ওরাও তো আমাদের ছাত্র। ইতিমধ্যে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এ ঘটনায় একটি কমিটি তৈরী করে দিয়েছেন। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে। তবে বর্মমানে পুলিশের পাহারায় কাজ চলছে।’
রবিবার সকালে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে গিয়ে দেখা যায়, মেডিকলে কলেজের বিভিন্ন বিভাগ ও হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের জন্য আনা বিভিন্ন আসবাবপত্র মেডিকেল কলেজের নতুন ভবনের বিভিন্ন কক্ষে মজুত করে রাখা হয়েছে। নির্ধারিত সময় কাজ করলে এসব আসবাবপত্র সংশ্লিষ্ঠ স্থান গুলোতে সংযোজন করার কথা। কিন্তু ছাত্রলীগের বাধার কারনে তার অধিকাংশই মজুত অবস্থায় পরে আছে। এতে করে হোস্টেলে অবস্থান করা ছাত্র ছাত্রীরা তাদের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেশ কয়েক জন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানাযায়, দীর্ঘদিন থেকেই মূলত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মোঃ সাদিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইফাদুল ইসলাম সহ বেশ কয়েকজন মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবী করে আসছিল। প্রাথমিক ভাবে তারা পাঁচ লাখ টাকা দাবী করে, এ নিয়ে শিক্ষকরা একাধিকবার কথা বললে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের সাথে অশোভন আচরন করে। তবে এ বিষয় মেডিকেল কলেজ শিক্ষকরা সরাসরি কেউ কথা বলতে সাচ্ছন্দ বোধ করছেন না।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার পর পরবর্তী আইগত পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
এ বিষয় পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মোঃ সাদিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইফাদুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তারা পুরো বিষয়ের সাথে ছাত্রলীগের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবী করেন। পাশপাশি এটিকে বিএনপি জামায়াত ঘরানার শিক্ষকদের একটি কর্মকান্ড বলেও জানান তারা।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ঠিক রাখার পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন সবাই।