আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পটুয়াখালীতে প্রান্তিক নারীদের দৃষ্টির সুরক্ষায় বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৮ মার্চ) পটুয়াখালী সদর উপজেলার ক্রোকমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। পটুয়াখালী ইয়ুথ ফোরাম ও পিডিও’র (পীস এন্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন) যৌথ উদ্যোগে, কমলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মৃধার পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ ক্যাম্পে বিনামূল্যে ৪০০ জন রোগীকে চক্ষু সেবা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে দরিদ্র ২০০ জনকে ঔষধ ও ১৫০ জনকে পাওয়ারযুক্ত চশমা বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি ৫০ জন ছানিপড়া রোগীকে শনাক্ত করা হয়, যাদের বিনামূল্যে লেন্স সংযোজনসহ অপারেশনের জন্য বরিশাল নেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে পটুয়াখালী ইয়ুথ ফোরামের নির্বাহী পরিচালক জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কমলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মৃধা। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য বশির মৃধা, স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন মৃধা এবং ইয়ুথ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রিফাতসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীরা। চক্ষু চিকিৎসা নিতে আসা ৬৫ বছরের বৃদ্ধা রহিমা বেগম বলেন, “অনেক দিন ধরে ভালোভাবে দেখতে পারছিলাম না। কিন্তু ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য ছিল না। এখানে এসে বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা, ঔষধ ও চশমা পেয়েছি। আল্লাহ যেন এদের ভালো রাখে।” অপর এক সুফলভোগী ৪৫ বছরের ফাতেমা বেগম বলেন, “আমার চোখে ছানি পড়েছিল। চিকিৎসার জন্য কোথায় যাব, কী করব বুঝতে পারছিলাম না। এখানে এসে ডাক্তার দেখিয়ে অপারেশনের সুযোগ পেয়েছি। বিনামূল্যে লেন্স সংযোগ করে বরিশালে অপারেশন করানো হবে শুনে আমি খুব খুশি।” জহিরুল ইসলাম বলেন, “একজন নারী পরিবার ও সমাজে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করেন। যদি তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়, তাহলে জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তাই প্রান্তিক নারীদের চক্ষু সুরক্ষার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছি।” কমলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কর্মসূচির পৃষ্ঠপোষক আব্দুস সালাম মৃধা বলেন, “আমাদের ইউনিয়নের অনেক দরিদ্র নারী চোখের সমস্যায় ভুগছেন, কিন্তু চিকিৎসা নিতে পারছেন না। তাদের কথা মাথায় রেখে আমরা এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই, যাতে আরও বেশি মানুষ উপকৃত হতে পারেন।” কর্মসূচির আওতায় মোট ৪০৬ জনকে চক্ষু সেবা প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৭০ জনকে বিনামূল্যে ঔষধ ও ১৫২ জনকে পাওয়ারযুক্ত চশমা দেওয়া হয়। এছাড়া ছানি অপারেশনের জন্য ৪৯ জনকে বাছাই করা হয়েছে এবং ২৫ জন রোগীকে চিকিৎসার জন্য বরিশাল ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। প্রান্তিক নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতেও এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন আয়োজকরা। এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল “অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন”।